Sagor Al Helal

aa2
  • সাম্প্রতিক লেখা

    এখনো বসন্ত আসে


    এখনো বসন্ত আসে

    -------------------------------

    বৌ-টা মারা যাওয়ার পর একটু কেমন যেন হয়ে গেছি আমি। কোন কিছুই ভালো লাগে না। কবিতা লেখাও ছেড়ে দিয়েছি প্রায়। আগে গানের জলসায় বসতাম, সেটাও অনেকদিন বসা হয় না। শেষ বয়সে ধর্ম-কর্মের দিকে মন দিতে হবে, সেটা জেনে বুঝেও- সে পথে হাঁটতে ইচ্ছে করে না। নামাজ পড়ি কি না, কেউ জানতে চাইলে ঘাড় এমনভাবে ঘুরাই যেন- হ্যাঁ এবং না দুটোই বুঝা যায়। যে যা মনে করে আর কি ! সমাজে তো সব রকমেরই মানুষ আছে, তাই না! আসলে আমার মনের অবস্থা পুরোপুরো তারাই বুঝবেন, যাদের বৌ মরে গেছে।

    সামাজিক অবস্থানের কারণে- এদিক ও দিক গিয়ে জৈবিক যন্ত্রণা দূর করারও সুযোগ নেই। কী যে দুর্বিসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে আমি কালাতিপাত করছি, তা আমি-ই জানি। মনের নেশাটাকে চোখের নেশায় পরিণত করার মানসে ইদানিং সংসদ ভবন এলাকায় ঘোরা-ফেরা করি। অন্যদের ব্যাপারগুলো দেখে মনে মনে খুশি হবার চেষ্টা করি ! তাতে কি কিছু হয় ? তারপরেও, যাই।

    দিনটা শুক্রবার ছিলো, সকাল সকাল গিয়েছি। এ দিন আগে ভাগেই মেলা বসে যায়। চোখের নেশাটাও বেড়ে গেছে। একটা ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে বসে চিনা বাদাম খাচ্ছিলাম আর চোখেরে বিনোদন দিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ, এ কি দেখলাম ! বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। চিনা বাদাম বিস্বাদ লাগতে লাগলো। কী অহংকারে সে আমার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলো ! আমাকে দেখালো যেন- সে কতো সুখি ! ওর সাথে আমার বিয়ের কথা উঠেছিলো। ও জানে, আমার বৌ গত হয়েছে। আমাকে যেন তাচ্ছিল্য করে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো- বৌ মরে যাওয়ায় আমি কতো অসহায় ! এতো বড়ো স্পর্ধা ! হিংসায় পুড়ে যেতে লাগলাম। আমার দিগ্বিদিক জ্ঞান রহিত হয়ে গেলো।

    পার্কে বেড়ানোর সুবাদে কিছু দুষ্টু লোকের সাথেও পরিচয় হয়েছিলো আমার। সিগ্রেট খাইয়েছি, চা নাস্তাও করিয়েছি। ওরাও বিষয়টা অনুধাবন করতে পেরেছে। আমার বিভ্রান্ত অবস্থা দেখে এগিয়ে এলো। জানতে চাইলো- কী ঘটনা বস্ ? সুবোধ বালকের মতো আমি সব কথা ওদের বলে দিলাম। কিছু ঘটনা বাড়িয়েই বললাম। প্রথমে ওরাও বেশ উত্তেজিত হলো। পরে স্থির হয়ে আমাকে নানারূপে সান্ত্বনা দিলো। আমার যেন সান্ত্বনা পাওয়ার মনটাও মরে গেছে। আমি কিছুতেই শান্ত হচ্ছিলাম না। আমার সাথে হেডম!

    দুষ্টু ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে কী যেন আলোচনা করলো। কাছে এসে বললো- বস, এক বোতল মালের পয়সা হবে! আমি যেন দিল দরিয়া হয়ে গেলাম। পকেট থেকে দশ হাজার টাকা বের করে দিয়ে বললাম- যা, আমি তো আর খাই না ! আমার নামে তোরা খেয়ে নে ! আমার কষ্ট তোরা বুঝবি নে, যাহ !

    ফেরার পথে বিজয় সরণীতে একটা জটলা চোখে পড়লো। এগিয়ে যেতেই বুঝলাম এক্সিডেন্ট। একজন ভদ্র মহিলা মারা গেছে। পাশে এক পুরুষ হাও-মাও করে কাঁদছে। আজ থেকে ওর-ও আমার মতো দশা হয়ে গেলো। ভীঁড়ের এক পাশে ওই দুষ্টু ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে হাসছে। ওরা আমাকে দেখে চোখ নাচালো, যেন জানতে চাইলো আমি খুশি হয়েছি কি না ! তার মানে - - -

    ভীঁড় থেকে বের হয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালাম। আমি তার কোন ভুলের প্রতিশোধ নিলাম ! হঠাৎ আমার দাদার সাথে দেখা হয়ে গেলো। দাদা আমাকে বলছেন- কিরে, বৌ মরেছে পাঁচ বছর। একটা বিয়ে করে নিলেইতো পারিস ! মুখে কেমন একটা বিদ্রুপের হাসি। কী আশ্চর্য, দাদাকে আর দেখলাম না ! আমার মনে হলো আমি ঘেমে যাচ্ছি। মাথাটা কিছুতেই কাজ করছে না। দাদা মারা গেছেন ২০ বছর। তিনি এলেন কোত্থেকে ? তাহলে !

    ঘুমটা ভাঙতেই দেখি- আমি থর থর করে কাঁপছি। সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে। তারপর মনে হলো- আমিতো বিয়েই করিনি। তাহলে কি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম এতোক্ষণ ! রাব্বিশ !

    -

    সাগর আল হেলাল

    ০৫.০৪.২০২২

    ================

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad

    8-Copy